মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০১:৩২ অপরাহ্ন

অর্ধশত নারীকে ধর্ষণ ও কথিত স্ত্রীকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলো ২০ বছরের যুবক

অর্ধশত নারীকে ধর্ষণ ও কথিত স্ত্রীকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলো ২০ বছরের যুবক

স্বদেশ ডেস্ক:

চাঁদপুরের সেই রসু খাঁর মতো আরেক সিরিয়াল ধর্ষকের সন্ধান মিলেছে নারায়ণগঞ্জে। জসিমউদ্দিন রানা নামের এ যুবক বয়স মাত্র ২০ বছর বয়সেই ভয়ঙ্কর সব অপরাধ করেছেন একের পর এক। গত ৫ বছরে তিনি প্রেমের ফাঁদে ফেলে অন্তত অর্ধশত কিশোরী ও নারীকে ধর্ষণ করেছেন তিনি।

তাদের কারো কারো সঙ্গে বসেছিলেন বিয়ের পিঁড়িতে। পরে কলহ নিয়ে তাদেরও হত্যা করেন তিনি।
মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে অর্ধশত নারীকে ধর্ষণ ও কথিত স্ত্রীকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন রানা।

এর আগে রূপগঞ্জে ভাড়া বাসায় কথিত স্ত্রীকে হত্যা করে তার গ্রামের বাড়ি পালিয়ে যায়।সেখান থেকে গতি ৫ মার্চ তাকে গ্রেফতার করে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, ১৫ বছর বয়সে এক কিশোরিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন জসিম উদ্দিন রানা। এভাবে একের পর এক কিশোরীকে ধর্ষণ করার অপরাধে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। চার বছর ধরে পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন। কিন্তু তারপরও তিনি চারিত্রিকভাবে সংশোধন হয়নি। উল্টা তার অপরাধের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।

বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার পদ্মা করমজাতলা এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে এই জসিম উদ্দিন (২০)। ডাক নাম রানা। তার পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে অন্তত অর্ধশত নারী। নিজের আসল পরিচয় গোপন করে এবং ছদ্মনামে গত চার বছরে দু’টি পাতানো বিয়ে করে সংসারও করেছেন তিনি। তার কথিত প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে পারভীন নামে আড়াই বছরের একটি কন্যা সন্তানও।

৫ মার্চ রাতে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী মাদারীপুরের সদর থানাধীন চরমুগুরিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুরভী আক্তার (১৯) হত্যা মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এই জসিম উদ্দিন রানা। এরপরই বেরিয়ে আসে তার অপকর্মের এসব নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার কাঞ্চন দক্ষিণ বাজার এলাকার মনির মাষ্টারের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও প্রাণ কোম্পানির এসআর জসিমউদ্দিন রানা তার স্ত্রী সুরভী আক্তার(১৯) কে শ্বাসরোধে হত্যা করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশ সোমবার রাতে জসিমউদ্দিন রানার নিজ বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটার থানাধীন পদ্মা করমজাতলা এলাকার অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।

মঙ্গলবার দুপুরে আটক রানা নারায়ণগঞ্জ আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

স্বীকারোক্তিতে রানা জানান, ১৫ বছর বয়স থেকেই তার বিকৃত যৌন লালসা ছিল। তিনি স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করতেন। এ কারণে এলাকা ছাড়া হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেন রানা। তিনি যেখানেই যেতো ওই এলাকার বিবাহিত বিধবা বিপত্নীক অথবা কিশোরীদের কথার মায়াজালে ফেলে ধর্ষণ করতেন। গত ২০১৬ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নোনদা এলাকার নান্নু মিয়ার মেয়ে নাজনীন বেগম প্রেমের টানে তার কাছে ছুটে এলে তিনি তাকে ঘরে তুলতে বাধ্য হয়। পরে নকল কাজী দিয়ে বিয়ের নাটক করে নাজনীনের সাথে সংসার শুরু করেন রানা। তার দাম্পত্যে পারভীন নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

গত বছর তাকে ফেলে পালিয়ে সাভার চলে আসেন রানা। সেখানে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্কের জেরে মাদারীপুরের সদর থানাধীন চরমুগুরিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুরভী আক্তার তার কাছে ছুটে এলে আবারো নকল কাজী দিয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন রানা। কিন্ত বিয়ের ব্যাপারটি রানার কয়েকজন প্রেমিকা টের পেয়ে যাওয়ায় তিনি গত ২ মাস পূর্বে রূপগঞ্জে চলে আসেন। এখানে প্রাণ কোম্পানির এসআর পদে চাকরি নিয়ে কাঞ্চন বাজারের মনির মাস্টারের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করেন।

এদিকে তার কথিত স্ত্রী সুরভি নকল বিয়ে ও বহু নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি টের পেয়ে তাকে আসল কাবিন করতে চাপ দেন। অন্যথায় তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলার হুমকি দেয় সুরভী। এতে ঘাবড়ে গিয়ে রানা স্ত্রী সুরভীকে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে পোলাও মাংস রান্নার করার জন্য অনুরোধ করেন। পরে রাতে খাবারের পর কোকাকোলার সাথে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট খাইয়ে সুরভীকে অচেতন করে রাতেই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে লাশ ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে বরগুনায় পালিয়ে যায়। সুরভী মারা গেছে- সেই খবর আবার তিনি শ্বশুর দেলোয়ার হোসেনকে মোবাইলে ফোন করে জানান।

এ ঘটনায় সুরভীর বাবা রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে নেমে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বরগুনার পাথরঘাটার থানাধীন পদ্মা করমজাতলা এলাকায় জসিম উদ্দিন রানার নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আরো জানান, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের রানা গত চার বছরে ৪৮ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তাদের মধ্যে কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে, কাউকে আবার টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন। আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুনের বর্ণনা দিয়ে তার অপরাধের সবকিছু স্বীকার করেছেন। তার দুই স্ত্রীর কারো কাছেই কোনো কাবিননামা নেই। মূলত দ্বিতীয় স্ত্রী তার একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পের্কর কথা জেনে যাওয়া এবং বিয়ের কাবিন করার জন্য চাপ দেয়ার কারণেই তাকে হত্যা করেছেন বলে জসিম জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন। এর পাশাপাশি আরো প্রায় অর্ধশত নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের কথাও তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি দেন।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান বলেন, স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আসামি জসিম উদ্দিন রানা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। ঘাতক রানার অন্য অপকর্মগুলোর ব্যাপারে তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877